অনলাইন ডেস্ক: বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় এরই মধ্যে ফাঁসির আদেশ পেয়ে কনডেম সেলে অবস্থান করছেন নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তিনি হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে। মূলত এই কারণেই ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন মিন্নি।
বিষয়টিকে (মিন্নির রায়) অনেকেই মানতে পারলেও আবার কিছু সংখ্যক মানুষ মানতে নারাজ। তাদের প্রশ্ন, কেন মিন্নি রিফাতকে হত্যা করতে যাবেন? তিনিই তো শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন। যেখানে রিফাতের হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য অসংখ্য মানুষ তাকিয়ে দেখেছে, সেখানে একমাত্র মিন্নিই তাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
তবে যে যাই মনে করুক, মিন্নির জবানবন্দির ভিত্তিতেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পেয়েছেন তিনি। তার দেওয়া জবানবন্দিকে রাষ্ট্রপক্ষের অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে সমর্থিত করা হয়েছে।
ফাঁসির রায়ে বলা হয়েছে, মিন্নির সঙ্গে স্বামী রিফাত শরীফের সম্পর্কের অবনতি ও মিন্নিকে মারধর করার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণেই মিন্নিকে ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে মিন্নির বিরুদ্ধে একসঙ্গে দুজন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিও উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, আসামি মিন্নি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, যে আইডিয়াল কলেজে পড়ার সময় ভিকটিম রিফাত শরীফের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। রিফাত শরীফের মাধ্যমে তার বন্ধু আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গেও পরিচয় এবং পরবর্তী সময়ে নয়ন বন্ডের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রায়ে এও বলা হয়, আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর। এই তথ্য গোপন করে ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল ভিকটিম রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয় মিন্নির। তার সঙ্গে বিয়ের পরও আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। এ নিয়ে ভিকটিম রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির মনোমালিন্য চলছিল।
পরে একদিন নয়ন বন্ডের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসামি মিন্নির উপস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হয়, এ কারণে হেলালের মোবাইল ফোনসেট আনায় হেলালের বন্ধু আসামি রিফাত ফরাজী ও মিন্নির সঙ্গে ভিকটিম রিফাত শরীফের ঝগড়া। এক পর্যায়ে মিন্নিকে মারধর, এমনকি হত্যাকাণ্ডের আগে মিন্নির তলপেটে লাথিও মেরেছিলেন রিফাত। যার কারণে তাকে (রিফাত) হত্যার পরিকল্পনা হয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে রায়ে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করার দায়ে আসামিরা সমানভাবে দায়ী।
রায়ে বলা হয়, আসামি মিন্নি এ মামলার ঘটনার পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা (মাস্টারমাইন্ড) এবং তার কারণেই হতভাগ্য রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এবং তার মা-বাবা পুত্রহারা হয়েছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তার পদাঙ্ক অনুসরণে তার বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এই মামলায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রসঙ্গত, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক রায়ে নিহতের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওইদিনই চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। পরে ৩ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।