আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত সরকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করেছে জানিয়ে দেশটিতে সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা।
চলতি মাসের গোড়াতেই তাদের ব্যাক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে এই সংস্থা। সেই কারণে বাধ্য হয়ে তাদের অনেক কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে বলেও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ভারতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার বিষয়টি তারা জানতে পারে গত ১০ সেপ্টেম্বর। দেশটির সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে সেখানে অ্যামনেস্টির মানবাধিকার সংক্রান্ত সব প্রচার কাজ ও গবেষণা থমকে গেছে।
এ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুলি ভেরার বলেন, ভারত সরকারের এ ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকার বিষয়ক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আপাতত থমকে গেছে।
তবে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের অঙ্গীকার এবং সম্পৃক্ততার অবসান তাতে হয়নি। সামনের দিনগুলোতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কীভাবে ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারে, তা আমরা খুঁজে বের করব।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ফরেইন কন্ট্রিবিউশন অ্যাক্টের আওতায় কখনোই নিবন্ধন নেয়নি- এই যুক্তিতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতে কোনো এনজিওর বিদেশি তহবিল নিতে গেলে ওই আইনে নিবন্ধিত হতে হয়।
তবে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনেই তারা সেখানে কাজ করে আসছে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলিক অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত সরকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে যে ‘ডাইনী শিকারে’ নেমেছে, এটা তার সর্বশেষ উদাহরণ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আরও অভিযোগ, মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিশানা করে বারবার আঘাত হেনেছে ভারত সরকার। তারই নবতম সংযোজন হল আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়া। ভিত্তিহীন অভিযোগ ‘উইচ হান্টিং’ করা হচ্ছে।’
অ্যামনেস্টির দাবি, সরকারের সম্পর্কে সমালোচনা মূলক রিপোর্ট বের করার কারণেই সরকারি রোষের শিকার হতে হয়েছে তাদের।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে যে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছিল, তার পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
তাদের প্রেস বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গত দু-বছর ধরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওপর যে আঘাত হানা চলছে এবং সম্প্রতি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া মোটেও দুর্ঘটনা নয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অভিনাশ কুমার বলছেন, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট-সহ সরকারি সংস্থাগুলি যে ভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত হ্যারাস করছে, তার কারণ আমরা সরকারি নীতিতে স্বচ্ছতার অভাবের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছি।
দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মীরে সম্প্রতি যে ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেই বিষয়ে নিজেদের রিপোর্ট পেশ করেছি আমরা। অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি বলেও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের।