স্টাফ রিপোর্টার : ভাস্কর্য নির্মাণে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। একইসাথে আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি বিশেষ চিঠি প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড- আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান।
আলেমদের বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনাগুলো নিম্নরূপ,
১. ইসলামে কোনো মানবমূর্তি অথবা ভাস্কর্য তৈরি সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।
২. মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর অবমাননা করে ব্যঙ্গচিত্র ধারণ এবং প্রদর্শনের বিরদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। একইসাথে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (স.) এর প্রতি অবমাননাকারীদের উপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।
৩. ধর্মপ্রাণ আলেম ওলামাদের উপর সমস্ত হয়রানি বন্ধ করা হোক এবং বিগত কয়েকদিনে দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান এবং মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
৪. রাজধানীর ধোলাইপাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
৫. যে সকল বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সে সব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়ি়ত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান, মিছিল- মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে।
৬. দ্বীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোন প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তাই জনগণকে কল্যাণের পথে আসার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সকল ধরণের দ্বীনি মাহফিল যথানিয়মে অবাধে চলার অনুমতি প্রদান করা হোক।
এসময় বৈঠকে অংশ নেওয়া ওলামা-আলেমরা বলেন, দেশব্যাপী আলেম সমাজ কঠোর ধৈর্য এবং সংযম অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভুত বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙিক্ষত হস্তক্ষেপ রোধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় বৈঠক থেকে।