স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বে বর্তমানে প্রতি ২৪ ঘণ্টার হিসেবে সবচেয়ে দ্রুত করোনা সংক্রমণ বাড়ছে ভারতে। সেখানে দৈনিক গড়ে ৭৫ হাজারের মত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত সপ্তাহে ভারতের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা ভারতের মূল ভূখণ্ড ছাড়িয়ে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতি বাঁচাতে গিয়ে রাজ্য সরকারগুলো লকডাউন তুলে দিয়েছে। এর কারণে সংক্রমণ নজিরবিহীনভাবে বেড়ে চলেছে। মেলাকা মানিপাল মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য গবেষক ড. অনন্ত ভান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সংক্রমণের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
ভারতের কিছু সরকারি হাসপাতালের অবস্থা এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার স্থান পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা না হলেও মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছে না। দিল্লির এক প্রসূতি নারী প্রসব বেদনা নিয়ে ১৫ ঘণ্টায় আট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না পেয়ে এম্বুলেন্সের পেছনে মারা যান।
বিশ্বে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশভিত্তিক মোট মৃত্যুর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। মোট মৃত্যুর তালিকায় ভারতের উপরে দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল এবং প্রথম অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা।
তবে আমেরিকা বা ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে মৃতের হার কম। এর কারণ হিসেবে অধিকাংশ জনসংখ্যা তরুণ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের বেশি। তবে ভারতের সরকারি হিসাবে করোনা মহামারির সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠছে না বলেও দাবি করেছে অনেক সংস্থা। তবে, ভারত সরকার করোনা শনাক্তের পরীক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২ লাখ করোনা শনাক্তের পরীক্ষা হতো, এখন সেখানে দৈনিক ১০ লক্ষ মানুষের করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়।
ভারতে করোনার সবচেয়ে বেশি বিস্তার ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। গত ১৪ দিনে পুরো দেশে করোনা সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশই হয়েছে রাজ্যটিতে। এখন অবধি সেখানে করোনায় মারা গেছেন ২৩ হাজারের বেশি মানুষ। গত সপ্তাহে একদিনে সেখানে মারা গেছেন ৩৫৫ জন। পুরো দেশজুড়ে এখন প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ। মহারাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা দেখা গেছে তামিল নাডু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও গুজরাটে।